বৃক্কের মতো গ্রোথিত শিকড়ে জন্মেছি একদা
লাল-সবুজের হাসিমুখে দাঁড়িয়ে আছি সর্বদা
গৌরবের মোড়কে উজ্জ্বল আত্মমর্যাদা।
সরল জীবন, ধবধবে সাদা
প্রফুল্ল সদা, হৃদয়ে হৃদয় বাঁধা
নামটাও আলাদা
মেন্দিপাতার আবেগে সরমিন্দা
গ্রামের শিরোনাম তাত্রাকান্দা।
কী আনন্দ অবিরাম!
ছোট্ট একটা গ্রাম, লোভনীয় নাম
পুকুরের শান্ত জল, একান্ত ছিমছাম
ছেলেবেলার স্মৃতি হেসে-খেলে উদ্দাম।
শস্যের আবহে নত দিগন্ত
কৃষকের হাসি ছুঁয়ে নাচে সীমান্ত দেহ!
স্নেহ-মিশ্রিত আবেগের গ্রন্থ
পূর্বপুরুষের ভিটে প্রাণের মিলনমন্ত্র
পুতুলের জলছবি কাদামাটির নক্ষত্র
সবুজ অক্ষরে রচিত শিশিরের শ্বেতপত্র
বলতে দ্বিধা নেই মনে বিন্দুমাত্র
মাটির আনন্দ নিঃশ্বাসের সর্বত্র।
ডিঙি নৌকা ঘাটে বান্ধা
আমরা যেন ভাই
জলের বাসিন্দা
কী আনন্দে
ডাহুক ডাকে সকাল-সন্ধ্যা
বিলের পাড়ে সুখের ঘর
গ্রামের নাম তাত্রাকান্দা।
কেউ করে না পরনিন্দা
পরচর্চা স্বার্থের ধান্দা
বাতাস বহে মৃদু-মন্দা
কাঁচা ভিটের ঘর
শুকনো বারান্দা
রাত-বিরাতে
গন্ধ বিলায় রজনীগন্ধা।
চার বেহারার পালকি
আঁকাবাঁকা পথ বৈকি
ধুলিবালি, জল কত কী!
ছেলেবেলার ভয়, বলতে বাঁধা কী?
পাটক্ষেতে চালাবুড়ির ভেলকি
মেলায় জুয়ার চড়কি
ঘুড়ি-নাটাই, গরুর গাড়ি আর কী!
কাদামাটির জলপথ পেরিয়ে
যেতুম নানাবাড়ি।
দেহের গন্ধে দারিদ্র্যের তিরস্কার
জীর্ণ গৃহ, ভালোবাসা অহংকার
জীবন-জীবিকার সমাহার
মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছি বারবার
সীমিত রোজগার, দরদে একাকার
শৈশব-স্মৃতির কোষাগার
মন চায় বারবার
প্রিয় গ্রামে ফিরে যেতে আবার।
দু-হাতে জীবিকার চাষাবাদ, সে কী আরাম!
শস্যের মৌসুম, আনন্দ ধুমধাম
বাতাসের দরদে শুকায় কষ্টের ঘাম
সৌর্য-বীর্যের চেহারা অকৃপণ দাম
ভালোবাসি গ্রাম
তাত্রাকান্দা কী সুন্দর নাম!
কারও পায়ে বাজে নূপুর
বেজে ওঠে কথার সুর
চোখে পুলক লাগে
হৃদয়ে লাগে মধুর!
মেঠোপথ ভাবের মাখামাখি
সুখ-দুঃখ বেদনার ফুলকি
বিকালের আকাশে দেখেছ কি
কলরবে মুখরিত সন্ধ্যার পাখি?
এপাড়া-ওপাড়া
ঋদ্ধ নয়নে মিলনের ধ্রুবতারা
কচিপাতার আনন্দ-চুম্বনে
নাচে মুকুলধারা।
শ্রাবণের জল অনন্য
ছুঁয়ে যায় গাঁয়ের অরণ্য
সবুজ ঘাস প্রকৃতির লাবণ্য
জীবন-জীবিকার জন্য
লাঙ্গল কাঁধে ছুটে যাও
মুখে যোগাও অন্ন।
পুরাতন বন্ধনে সম্পর্কের ছন্দ
পোড়ামাটির মতোই পোড়া গন্ধ
গ্রামীণ জীবন সেরা প্রবন্ধ।
বিশুদ্ধ রসদে সমৃদ্ধ প্রকৃতি
প্রিয় মুখে স্নেহের মিনতি
আপন রঙে- রাঙিয়ে দাও আত্মীয়তার রীতি।
সাফল্যের লুকোচুরি প্রতিদিন
চোখের অন্বেষায় রঙিন
জীবনে বহুমাত্রিক অভিষেক
বাহিরে রঙের ধাঁ-ধাঁ, অন্তরে এক
আনন্দের বার্তা নিয়ে
ব্যক্তিত্ব সাজায় বিবেক।
কেউ-বা দাদা, কেউ-বা চাচা
কেউ-বা আবার পিসি
আমার গ্রামে স্মৃতি হয়ে
ঘুমিয়ে আছে- আমার বাবার হাসি।
কেউ-বা বোন, কেউ-বা ভাই
কেউ-বা ফুফু, কেউ-বা চাচী
যত দূরেই থাকি এই প্রেরণায় বাঁচি।
এপারে-ওপারে আলোকিত জনপদ
দিনে-দিনে গাঢ় হয় সম্পর্কের সম্পদ
মাটির খাঁটি মানুষ, মুখে নিরেট হাসি
গ্রামটাই আমার দেশ, খুব ভালোবাসি।